স্বপ্নের পরিধি বাড়ছে ইংল্যান্ডের

ববি মুর, ববি চার্লটন, গ্যারি লিনেকার, পল গাসকোয়েন, অ্যালান শিয়েরার, ডেভিড বেকহ্যাম, মাইকেল আওয়েন থেকে ওয়েন রুনি— গত ৫২ বছরে বিশ্ব ফুটবলে একের পর এক তারকা উপহার দিয়েছে ইংল্যান্ড। অথচ বিশ্বকাপ অধরাই থেকে গিয়েছে। আশা করছি হ্যারি কেন, রাহিম স্টার্লিংরা সেই ছবিটা বদলাতে পারবে। কথাগুলো বলছিলেন সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ট্রেভর জেমস মরগান।

বিশ্বকাপ শুরুর মাসখানেক আগে ইংল্যান্ডকে কেউ ফেভারিটের তালিকায় রাখেনি। ইংল্যান্ড যে রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, কেউ আশাই করছে না। আমার এক বন্ধু তো বলেই ফেলল, ‘লিনেকার, বেকহ্যামের মতো ফুটবলাররাই পারলেন না। এরা কী করবেন? হ্যারি কেনদের নিয়ে বেশি আশা না-করাই ভাল। শেষ ষোলোয় পৌঁছতে পারলেই যথেষ্ট।’ আমি সে দিনই ওকে বলেছিলাম, ‘তারকা না-থাকাটাই আমাদের দলের সব চেয়ে বড় সুবিধে। দেখবে, এরাই বিশ্বকাপে চমকে দেবেন।’

আমার অনুমানই ঠিক। তিউনিসিয়াকে ২-১ হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই তার ইঙ্গিত দিয়েছিল গ্যারেথ সাউথগেটের দল। রবিবার তো পানামাকে উড়িয়েই দিল ইংল্যান্ড। হ্যাটট্রিক করলেন হ্যারি কেন। দুই ম্যাচ মিলিয়ে পাঁচ গোল করে সোনার বুট দখলের লড়াইয়ে ঢুকে পড়লেন টটেনহ্যাম হটস্পার স্ট্রাইকার। ২০১৭-১৮ মরসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৮ ম্যাচে ৪১ গোল করেছেন। ইপিএলে অল্পের জন্য সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার হ্যাটট্রিক হয়নি হ্যারি কেনের। তবুও রুনিদের মতো ওকে নিয়ে মাতামাতি হয় না। রাশিয়া বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের ফুটবল আকাশে জন্ম নিলেন হ্যারি কেন নামের নতুন তারা।

নিজ়নি নোভগোরদ স্টেডিয়ামে পানামার বিরুদ্ধে ম্যাচের আট মিনিটেই গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন জন স্টোনস। কর্নারের সময়ে রক্ষণ ছেড়ে ইংল্যান্ড ডিফেন্ডার কখন উঠে এসেছেন, বুঝতেই পারেননি পানামার ফুটবলাররা। ২২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল হ্যারি কেনের। ৩৬ মিনিটে গোল করেন হেসে লিনগার্ড। চার মিনিটের মধ্যে ফের গোল স্টোনসের। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন হ্যারি কেন। অর্থাৎ, প্রথমার্ধেই ইংল্যান্ড ৫-০ এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে ৬২ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে উঠে যান হ্যারি কেন। পানামার হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ফিলিপে বালয়।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইংল্যান্ড সব চেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতে শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাওয়ায় আমি খুশি তো বটেই, তার চেয়েও বেশি উচ্ছ্বসিত খেলা দেখে। ইংল্যান্ডে ৪-৪-২ ছকই সব চেয়ে জনপ্রিয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ববি রবসন ৩-৫-২ ছকে খেলে চমকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিলাম। তার পরেই ইংল্যান্ড ফিরে যায় পুরনো ছকে। পরের বিশ্বকাপে যোগ্যতাই অর্জন করতে পারিনি আমরা।

সাউথগেটের মধ্যে কিংবদন্তি ববি রবসনের ছায়া দেখছি। দলকে খেলাচ্ছেন ৩-৫-২ ছকে। এই পদ্ধতিতে খেলা কিন্তু একেবারেই সহজ নয়। ফুটবলারদের সামান্য বোঝাপড়ার অভাব মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। ইংল্যান্ডের দু’টো ম্যাচেই দেখলাম লিনগার্ড, স্টোনস, হ্যারি কেনদের মধ্যে দুর্দান্ত বোঝাপড়া। এর জন্য কৃতিত্ব দেব কোচকেই। সাউথগেট ইংল্যান্ডকে দল হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছেন। সেটা সম্ভব হয়েছে, দলে কোনও তারকা না-থাকায়

কোচ সাউথগেটের প্রশংসা করে মরগান বলেন,‘সাউথগেট সাহসী কোচ। রুনিকে বাদ দেওয়া ওর জন্য সহজ ছিলো না। কিন্তু সে সেটা করে সফল হয়েছে। হ্যারি কেনরা তো রীতিমতো এখন তারকা। আশা করি এই হ্যারি কেনরা ১৯৬৬ সালে সুখস্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে।’